শাসন
মানুষগুলো কেমন দেখ চোখ রাঙিয়ে দেখে
যেন আমার হাঁটতে মানা, হাসতে মানা পথে
যেন আমার রঙ্গ দেখে পিত্ত জ্বলে যায়
যেন উঠোন ছেড়ে আমার বাইরে আসা ভুল।
আসলে ভুল জন্ম নিয়ে অপবিত্র দেশে।
পা বাড়ালেই পায়ের নীচে কাঁপন তোলে মাটি
মাটিও বোঝে হিংস্র এক জন্তু বাস করে
ইট-পাথরে, দরদালানে মানুষ বলে নাম।
মানুষ দেখ, মানুষ শোনো চতুর্দিকে ঘিরে
ওরা আমার সুডোল বাহু, কবজি কেটে নেবে
ওরা আমার জিহবা কেটে উদর ফেঁড়ে উপড়ে নেবে চোখ
কন্ঠনালি চেপে আমার শিরায় দেবে বিষ
ওদের আমি চিনি ওদের মানুষ বলে নাম।
বন্য মোষ, সাপ ও শার্দুলের ভয়ে নয়
মানুষ হয়ে মানুষ-ভয়ে দৌড়ে ফিরি ঘর।
তসলিমা নাসরিন
আমার কিছু যায় আসে না
Poetry of Taslima Nasrin
Categories
- আমার কিছু যায় আসে না (1)
- কষ্টের কস্তুরী (1)
- কিছুক্ষণ থাকো (1)
- খালি খালি লাগে (1)
- তবু ফিরব (1)
- তসলিমা নাসরিন (1)
- নির্বাসিত নারীর কবিতা (1)
- নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে (1)
- পদ্মপাতা তুমি ভাসো (1)
- বালিকার গোল্লাছুট (2)
- শাসন (1)
- সন্তাপ (1)
- সমাবর্তন (1)
আমার ব্লগ তালিকা
-
-
বাকবন্দির জবানবন্দি১৪ বছর আগে
-
-
এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে!১৫ বছর আগে
-
-
A poem for Taslima Nasrin১৫ বছর আগে
-
-
-
-
লেবেলসমূহ: আমার কিছু যায় আসে না, শাসন
পারো তো ধর্ষণ করো
আর ধর্ষিতা হয়ো না, আর না
আর যেন কোনও দুঃসংবাদ কোথাও না শুনি যে তোমাকে ধর্ষণ করেছে
কোনও এক হারামজাদা বা হারামজাদার দল।
আমি আর দেখতে চাই না পুরুষের পত্রিকায় পুরুষ সাংবাদিকের লেখা সংবাদ
পড়তে পড়তে কোনও পুরুষ পাঠকের আরও একবার মনে মনে ধর্ষণ করা ধর্ষিতাকে।
ধর্ষিতা হয়ো না, বরং ধর্ষণ করতে আসা পুরুষের পুরুষাঙ্গ কেটে ধরিয়ে দাও হাতে,
অথবা ঝুলিয়ে দাও গলায়,
খোকারা এখন চুষতে থাক যার যার দিগ্বিজয়ী অঙ্গ, চুষতে থাক নিরুপায় ফুলে থাকা
অণ্ডকোষ, গিলতে থাক এসবের রস, কষ।
ধর্ষিতা হয়ো না, পারো তো পুরুষকে পদানত করো, পরাভূত করো,
পতিত করো, পয়মাল করো,
পারো তো ধর্ষণ করো,
পারো তো ওদের পুরুষত্ব নষ্ট করো।
লোকে বলবে, ছি ছি, বলুক।
লোকে বলবে এমনকী নির্যাতিতা নারীরাও যে তুমি তো মন্দ পুরুষের মতোই,
বলুক, বলুক যে এ তো কোনও সমাধান নয়, বলুক যে তুমি তো তবে ভাল নও
বলুক, কিছুতে কান দিয়ো না, তোমার ভাল হওয়ার দরকার নেই,
শত সহস্র বছর তুমি ভাল ছিলে, মেয়ে, এবার একটু মন্দ হও।
চলো সবাই মিলে আমরা মন্দ হই,
মন্দ হওয়ার মতো ভাল আর কী আছে কোথায় !
তসলিমা নাসরিন
কিছুক্ষণ থাকো
লেবেলসমূহ: কিছুক্ষণ থাকো, তসলিমা নাসরিন
পদ্মপাতা, তুমি ভাসো
ভাসো, ভেসে থাকো, পদ্মপাতা, ভেসে থাকো
তোমাকে দেখব
ভেসে থেকে সুখ দাও, পদ্মপাতা।
দুঃখগুলোর ওপর আমি ভাসতে চেয়েছি তোমার মতো, পারিনি
ডুবে গেছি।
দুঃখের গভীর জলে একটি সোনার কৌটো, সেই কৌটোর
ভেতর আরেক কৌটো,
সেই আরেক কৌটোয় আরেক কৌটো, খুলে খুলে শেষ
কৌটোয় দেখি এক টুকরো দুঃখই পড়ে আছে।
ভেসে থাকো, পদ্মপাতা
না ধুলো না জল গায়ে মেখে ভাসো,
ভেসে থাকা দেখাও সুখ, সুখ দাও পদ্মপাতা।
পদ্ম ফুটে যাক, ফুটে ঝরে যাক, রূপসীর রূপ হেমন্তের হলুদ
পাতার মতো
তুমি ভেসে থাকো জলে, ঘোলা নষ্ট জলে আবর্জনা জলে।
ভেসে থাকা যে কেউ পারে না, সাততাড়াতাড়ি ডুবে যায়
যারা সুখে থাকে, সুখের অতলে খাবি খেতে খেতে মরে, জানে না
কতটা নির্লিপ্ত হলে ভাসা যায়
না ছোঁয়া যায় মণিমুক্তো, না ধরা যায় তিমি, আকাশের সঙ্গে
কতটুকু সখ্য হলে
কে আছে কী আছে নীচে, ক্ষুদ্র তুচ্ছ কী কী, খড়কুটো, বাসি
ফুল, কার কী নির্যাস
না ছুঁয়ে না কিছু ভাসা যায়।
নিরুদ্বেগ মেঘের মতো, মেঘেরা যেমন খেলে আকাশের
উঠোনে তেমন পদ্মপাতা খেল তুমি
ছুঁই না ছুঁই খেলা, ভেসে থাকো,
পদ্মপাতা, ভেসে থাকো, তোমাকে দেখব।
তসলিমা নাসরিন
খালি খালি লাগে
লেবেলসমূহ: খালি খালি লাগে, পদ্মপাতা তুমি ভাসো
কষ্টের কস্তুরী
কিছু কিছু কষ্ট আছে
ক্ষতে কোন মলম লাগে না।
কারওর শুশ্রুষা নয়
গাঢ় মমতায় জেগে থাকা রাত নয়
হাওয়া পরিবর্তন, তা-ও নয়
সেরে যায়।
কিছু কষ্ট নিয়ত পোড়ায়
ক্ষুদ্র তুচ্ছ কিছু, ফুঁ মেরে উড়িয়ে
দেওয়ার মতো কিছু
কষ্টের ক্ষীণাঙ্গী শরীরেও
আগুনের আঁচ থাকে
সেইসব কষ্টগুলো
বর্শা বেঁধায় না
দুই চক্ষু অন্ধ করে না, কেবল
কোথায় কীসব যেন
পোড়াতে পোড়াতে করে নিভৃত অঙ্গার।
কিছু কিছু কষ্ট আছে
রাত পোহাবার আগে বাতাস মেলায়,
কিছু কষ্ট বাসা বাঁধে
ভালবেসে থেকে যায় পুরোটা জীবন।
তসলিমা নাসরিন
নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে
লেবেলসমূহ: কষ্টের কস্তুরী, নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে
সারাদিন কেটে যায় বিষে ও বিষাদে
সংসারে তেমন মানুষ কি আছে যে কিনা দীর্ঘ দীর্ঘ দিন দুঃখ না দিয়ে পারে ?
যে মানুষই সুখের নদীতে সাম্পান ভাসাবে বলে শর্ত দিয়েছে,
যে মানুষই কাছে এসে বিস্তর গল্প শুনিয়েছে ফুলের জন্মের,
প্রজাপতির ডানায় যে রং থাকে সেই রঙের...
যে মানুষই আকাশের ডাল থেকে চাঁদ ছিঁড়ে এনে কপালে পরাতে চেয়েছে আমার
তারই খুব তাড়া পড়ে যাবার যদি হাতখানা না বাড়াই তার হাতের দিকে ক্রমশ,
অথবা যদি বাড়াই, সে ছোঁয়, ছুঁয়ে একটু একটু করে মন্থন করে মেদ মাংস, বশ করে
স্নায়ু।
ভালবাসি শব্দটি যে উচ্চারণ করে বেশি, সেই যায় ভেড়াতে
এক-এক দিন এক-এক ঘাটে তার বুকের সাম্পান...
বেনিয়া প্রেমিকগুলো কড়া দরে ফেরি করে ফেরে প্রেমের অঙ্কুর।
সংসারে আসলে তেমন মানুষ নেই, যে কিনা দীর্ঘ দীর্ঘ দিন দুঃখ না দিয়ে পারে।
তসলিমা নাসরিন
আয় কষ্ট ঝেঁপে জীবন দেব মেপে
সমাবর্তন
১
যদি সে যাবেই যাক।
শুধু থাক
পোড়া হৃদয়ের খাক
আর উদ্যানে এক ঝাঁক কালো কাক।
২
কোথায় পালাবে,
যত দূরে যাবে স্মৃতিরা ধরবে ছেঁকে
ছিঁড়ে-খুঁড়ে খাবে
যেতে যেতে পথ শেষবার যাবে বেঁকে।
৩
ঘুরে ঘুরে ওই এক বিন্দুতে ফেরা,
খামোকাই এত দুর্বহ লুকোছাপা!
ফিরে তো দেখেই হৃদয়ের তার ছেঁড়া
বৃত্তের মাপে জীবনের পথ মাপা।
তসলিমা নাসরিন
বালিকার গোল্লাছুট
১৯৯২
লেবেলসমূহ: বালিকার গোল্লাছুট, সমাবর্তন